Monday, June 24, 2019

মৃত্যু, কবর ও কিয়ামত দিবসের বর্ণনাঃ

প্রকাশ্য দিবালোকের সত্য হল আমাদের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে, কিয়ামত দিবসের পূর্ব পর্যন্ত কবরে বারযাখের জীবন অতিবাহিত করতে হবে এবং কিয়ামত দিবসে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি, নাস্তিকসহ সবাইকে আমাদের রবের সামনে দাড়াতে হবে। আমাদের দুনিয়ার জীবনের কাজের হিসাব নেয়া হবে সেদিন এবং যার যার আমল অনুযায়ী জান্নাত ও জাহান্নামে যেতে হবে। সেদিনের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করলেও ভয়ে আত্মা কেপে উঠে। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।

কুরআনের বর্ণনাঃ

নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং সেই কাফির অবস্থায়ই মারা যায়, তাদের কেউ পৃথিবী-ভরা স্বর্ণও বিনিময় স্বরূপ প্রদান করতে চাইলে তা তার কাছ থেকে কক্ষণো গ্রহণ করা হবে না। এরাই তারা যাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা আল-ইমরান/৩, আয়াতঃ৯১]


প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। [সূরা আল-ইমরান/৩, আয়াতঃ১৮৫]

তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে বসবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দূর্গ মধ্যে অবস্থান কর। যদি তাদের কোন কল্যাণ ঘটে, তখন তারা বলে, এটা আল্লাহর তরফ হতে। পক্ষান্তরে যদি তাদের কোন অকল্যাণ ঘটে তখন বলে, ‘এটা তো তোমার তরফ হতে।’ বল, ‘সবকিছুই আল্লাহর তরফ হতে।’ এ সম্প্রদায়ের হল কী যে, তারা কোন কথাই বুঝে না। [সূরা আন-নিসা/৪, আয়াতঃ৭৮]

তারা কি কুরআনের মর্ম বিষয়ে চিন্তে-ভাবনা করে না? যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তাতে তারা অবশ্যই বহু অসঙ্গতি পেত। [সূরা আন-নিসা/৪, আয়াতঃ৮২]

আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে? [সূরা আন-নিসা/৪, আয়াতঃ৮৭]

তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও যমীনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’। [সূরা আল-আরাফ/৭, আয়াতঃ১৮৭] 


তুমি কখনও মনে করনা যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে। কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা যুলম করেছিল তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? [সূরা ইবরাহীম/১৪, আয়াতঃ৪২-৪৪]

যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও এবং মানুষ উপস্থিত হবে আললাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী। সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করবে। এটা এ জন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের প্রতিফল দিবেন, আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর। এটা মানুষদের জন্য একটা বার্তা যার দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে আর যাতে তারা জানতে পারে যে, তিনি এক ইলাহ আর যাতে বুদ্ধিমান মানুষেরা উপদেশ লাভ করে। [সূরা ইবরাহীম/১৪, আয়াতঃ৪৮-৫২]

আর আল্লাহ যদি মানবজাতিকে তাদের যুলমের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (যমীনে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন এক মুহূর্তও পেছাতে পারে না, এবং আগাতেও পারে না। [সূরা আন-নাহল/১৬, আয়াতঃ৬১]

ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য, আর তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার লাভের জন্য স্থায়ী সৎকাজ হল উৎকৃষ্ট আর আকাঙ্ক্ষা পোষণের ভিত্তি হিসেবেও উত্তম। (সেদিনের কথা চিন্তা কর) যেদিন আমি পর্বতমালাকে চালিত করব, আর পৃথিবীকে দেখতে পাবে উন্মুক্ত প্রান্তর আর তাদের সববাইকে আমি একত্রিত করব, কাউকেও বাদ দেব না। তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধভাবে হাজির করা হবে (আর তাদেরকে বলা হবে), ‘তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনিভাবে যেভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তোমরা তো ধারণা করেছিলে যে, আমার কাছে তোমাদের সাক্ষাতের নির্দিষ্টকাল আমি কক্ষনো উপস্থিত করব না।’ আর ‘আমালনামা হাজির করা হবে, আর তাতে যা (লেখে রাখা আছে) তার কারণে তুমি অপরাধী লোকদেরকে দেখতে পাবে ভীত আতঙ্কিত। আর তারা বলবে, ‘হায় কপাল! এটা কেমন কিতাব যে ছোট বড় কোন কাজই ছেড়ে দেয়নি বরং সব কিছুর হিসাব রেখেছে।’ তারা যা করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে, আর তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি যুলম করবেন না। [সূরা আল-কাহফ/১৮, আয়াতঃ৪৬-৪৯]

আর মানুষ বলে, ‘আমার মৃত্যু হলে আমাকে কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত করা হবে?’ মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি অথচ সে কিছুই ছিল না? অতএব তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে ও শয়তানদেরকে সমবেত করব, অতঃপর জাহান্নামের চারপাশে নতজানু অবস্থায় তাদেরকে হাযির করব। অতঃপর প্রত্যেক দল হতে দয়াময়ের প্রতি সবচেয়ে অবাধ্যকে অবশ্য অবশ্যই টেনে বের করব। আর আমি অবশ্য অবশ্যই খুব ভাল করে জানি তাদের মধ্যে কারা জাহান্নামে দগ্ধ হওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। [সূরা মারিয়াম/১৯, আয়াতঃ৬৬-৭০] 


প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। [সূরা আল-আম্বিয়া/২১, আয়াতঃ৩৫]

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, কিয়ামাতের কম্পন এক ভয়ানক জিনিস। সেদিন তুমি দেখবে প্রতিটি দুগ্ধদায়িনী ভুলে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে, আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)। কতক মানুষ জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ সম্বন্ধে বাদানুবাদ করে, আর প্রত্যেক অবাধ্য শয়ত্বানের অনুসরণ করে। যার (অর্থাৎ শয়ত্বানের) সম্পর্কে বিধান করা হয়েছে যে, যে কেউ তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়বে, সে তাকে বিপথগামী করবে, আর তাকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শাস্তির দিকে পরিচালিত করবে। [সূরা আল-হজ্জ/২২, আয়াতঃ১-৪] 


হে মানুষ! পুনরুত্থানের ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দিহান হও, তাহলে (চিন্তা করে দেখ) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, অতঃপর শুক্র হতে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট অবস্থায় (আমার শক্তি-ক্ষমতা) তোমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য। আর আমি যাকে ইচ্ছে করি তাকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে রাখি, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে আনি শিশুরূপে, অতঃপর (লালন পালন) করি যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ণ শক্তির বয়সে পৌঁছতে পার। তোমাদের কারো কারো মৃত্যু ঘটাই, আর কতককে ফিরিয়ে দেয়া হয় নিস্ক্রিয় বার্ধক্যে যাতে (অনেক) জ্ঞান লাভের পরেও তাদের আর কোন জ্ঞান থাকে না। অতঃপর (আরো) তোমরা ভূমিকে দেখ শুষ্ক, মৃত; অতঃপর আমি যখন তাতে পানি বর্ষণ করি তখন তাতে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়, আর তা উদগত করে সকল প্রকার নয়নজুড়ানো উদ্ভিদ (জোড়ায় জোড়ায়)। এটি এজন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনিই সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আর কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পুনরুত্থিত করবেন। তবুও মানুষের মধ্যে এমন আছে যারা জ্ঞান, পথের দিশা ও কোন আলোকপ্রদানকারী কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। বিতর্ক করে অবজ্ঞাভরে) ঘাড় বাঁকিয়ে (লোকেদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে। তার জন্য আছে লাঞ্ছনা এ দুনিয়াতে, আর কিয়ামাতের দিন তাকে আস্বাদন করাব (অগ্নির) দহন যন্ত্রণা। (বলা হবে) তোমার হাত দু’খানা আগেই যা পাঠিয়েছিল এটা তারই ফল, কারণ আল্লাহ তো তাঁর বান্দাহদের প্রতি যালিম নন। [সূরা আল-হজ্জ/২২, আয়াতঃ৫-১০]

এমনকি যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু এসে হাজির হয় তখন সে বলে : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আবার (দুনিয়াতে) পাঠিয়ে দাও। যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনি। না এটা হবার নয়; এটাতো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে বারযাখ থাকবে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত। অতঃপর যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবেনা, এবং একে অপরের খোঁজ খবর নিবেনা। যাদের (সৎ কাজের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতগুলো আবৃত্তি করা হত না? তোমরা সেগুলোকে মিথ্যে জেনে প্রত্যাখ্যান করেছিলে। তারা বলবে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পরাস্ত করেছিল, আর আমরা ছিলাম এক পথভ্রষ্ট জাতি। হে আমাদের রাব্ব! এই আগুন হতে আমাদেরকে উদ্ধার করুন; অতঃপর আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি তাহলেতো আমরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী হব। আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলনা। [সূরা আল-মুমিনুন/২৩, আয়াতঃ৯৯-১০৮] 


আর যারা আমার সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে না, তারা বলে, ‘আমাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাই না কেন’? অবশ্যই তারা তো তাদের অন্তরে অহঙ্কার পোষণ করেছে এবং তারা গুরুতর সীমালংঘন করেছে। যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। আর তারা বলবে, ‘হায় কোন বাধা যদি তা আটকে রাখত’। আর তারা যে কাজ করেছে আমি সেদিকে অগ্রসর হব। অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব। [সূরা আল-ফুরকান/২৫, আয়াতঃ২১-২৩]

সেদিন মেঘমালা সহ আকাশ বিদীর্ণ হবে আর ফেরেশতাদেরকে ধীরে ধীরে নীচে নামিয়ে দেয়া হবে। সেদিন সত্যিকারের কর্তৃত্ব হবে দয়াময় (আল্লাহ)’র এবং কাফিরদের জন্য দিনটি হবে কঠিন। আর সেদিন যালিম নিজের হাত দু’টো কামড়িয়ে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম’! 'হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম'। ‘অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক’। [সূরা আল-ফুরকান/২৫, আয়াতঃ২৫-২৯]

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর এবং সেই দিনকে ভয় কর যেদিন পিতা তার সন্তানের কোন উপকার করতে পারবে না এবং সন্তানও তার পিতার কোন উপকারে আসবে না। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোকা দিতে না পারে এবং মহাপ্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে ধোকায় ফেলতে না পারে। নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। [সূরা লুকমান/৩১, আয়াতঃ৩৩-৩৪]

মানুষ কি দেখে না যে আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু হতে? অতঃপর সে হয়ে গেল সুস্পষ্ট ঝগড়াটে। সে (আমার সৃষ্টির সাথে) আমার তুলনা করে, অথচ সে তার নিজের সৃষ্টির ব্যপারটি ভুলে যায় (যে তাকে আমিই সৃষ্টি করেছি)। সে বলে, ‘হাড়গুলোকে কে আবার জীবন্ত করবে যখন তা পচে গলে যাবে?’’ বল, ‘‘তাকে তিনিই জীবন্ত করবেন যিনি ওগুলোকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি প্রতিটি সৃষ্টি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত। [সূরা ইয়াসীন/৩৬, আয়াতঃ৭৭-৭৯]

যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে ক্বিয়ামতের দিনে তুমি তাদের মুখগুলো কালো দেখতে পাবে. অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নামে নয়? [সূরা আয-যুমার/৩৯, আয়াতঃ৬০]

আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। বরং তুমি আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে। আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না। প্রত্যেকের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। লোকেরা যা করে তা তিনি খুব ভালভাবেই জানেন। [সূরা আয-যুমার/৩৯, আয়াতঃ৬৫-৭০]

নিশ্চয় যারা হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পৃষ্টপ্রদর্শনপূর্বক মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদের কাজকে চমৎকৃত করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দিয়ে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তাকে যারা অপছন্দ করে তাদেরকে তারা বলে দিয়েছে যে, কোন কোন ব্যাপারে আমরা তোমাদেরকে মানবো। আল্লাহ তাদের গোপন কথাবার্তাকে খুব ভাল করেই জানেন। তখন কেমন দশা হবে যখন ফেরেশতারা তাদের মুখে আর পিঠে মারতে মারতে তাদের জান বের করবে। [সূরা মুহাম্মদ/৪৭, আয়াতঃ২৫-২৭]

আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। [সূরা আয-যারিয়াত/৫১, আয়াতঃ৫৬]

যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। তার সংঘটনের কোনই অস্বীকারকারী থাকবে না। (অনেককে করা হবে) নীচু, (অনেককে করা হবে) উঁচু, যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে হবে প্রকম্পিত, আর পাহাড়গুলো হবে চূর্ণ বিচূর্ণ, তখন তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। আর তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন দলে। তখন (হবে) ডান দিকের একটি দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল। আর বাম দিকের একটি দল; কত দুর্ভাগা বাম দিকের দলটি। আর (ঈমানে) অগ্রবর্তীরা তো (পরকালেও) অগ্রবর্তী, তারাই (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে । [সূরা আল-ওয়াকিয়া/৫৬, আয়াতঃ১-১২]

তোমাদের মধ্যে মৃত্যু আমিই নির্ধারণ করি, আর আমি কিছুমাত্র অক্ষম নই তোমাদের আকার আকৃতি পরিবর্তন করতে আর তোমাদেরকে (নতুনভাবে) এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করতে যা তোমরা জান না। তোমরা তোমাদের প্রথম সৃষ্টি সম্বন্ধে অবশ্যই জান তাহলে (আল্লাহ যে তোমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম এ কথা) তোমরা অনুধাবন কর না কেন? [সূরা আল-ওয়াকিয়া/৫৬, আয়াতঃ৬০-৬২]

তবুও কি তোমরা এ বাণীকে তুচ্ছ মনে করছ? আর তাকে মিথ্যে বলাকেই তোমরা তোমাদের জীবিকা বানিয়ে নিয়েছ। তাহলে কেন (তোমরা বাধা দাও না) যখন প্রাণ এসে যায় কণ্ঠনালীতে? আর তোমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখ, আর আমি তোমাদের চেয়ে তার (অর্থাৎ প্রাণের) নিকটবর্তী, কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। [সূরা আল-ওয়াকিয়া/৫৬, আয়াতঃ৮১-৮৫]

আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে, তারাই তাদের রবের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিফল এবং তাদের নূর। আর যারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। [সূরা আল-হাদীদ/৫৭, আয়াতঃ১৯-২০]

বল- ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাচ্ছ তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। অতঃপর তোমাদেরকে দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী (আল্লাহ)’র নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে; অতঃপর তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে যা তোমরা করতে। [সূরা আল-জুমুআ/৬২, আয়াতঃ৮]

হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ আর তোমাদের সন্তানাদি তোমাদেরকে যেন আল্লাহর স্মরণ হতে গাফিল করে না দেয়। যারা এমন করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আল্লাহ কাউকে কক্ষনো অবকাশ দেন না যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যায়। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি খবর রাখেন। [সূরা আল-মুনাফিকূন/৬৩, আয়াতঃ৯-১১]

বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব। [সূরা আল-মুলক/৬৭, আয়াতঃ১-৫]

অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক। পৃথিবী আর পর্বতমালা উৎক্ষিপ্ত হবে আর একই আঘাতে তাদেরকে চূর্ণ বিচূর্ণ করা হবে। সেদিন সংঘটিত হবে মহা প্রলয়। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতাগণ আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে (বিচারের জন্য) হাজির করা হবে আর তোমাদের কোন কাজই- যা তোমরা গোপন কর- গোপন থাকবে না। [সূরাআল-হাক্কাহ/৬৯, আয়াতঃ১৩-১৮]

অতঃপর যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, আর সেদিন হবে কঠিন দিন। (যা) কাফিরদের জন্য মোটেই সহজ নয়। [সূরা আল-মুদ্দাসসির/৭৪, আয়াতঃ ৮-১০]

নিশ্চয়ই জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদসমূহের অন্যতম। মানুষের জন্য সতর্ককারীস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে যে (কল্যাণের পথে) এগিয়ে যেতে চায় অথবা পেছনে পড়ে থাকতে চায় তার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ। কিন্তু ডান দিকের লোকেরা নয়, তারা থাকবে জান্নাতে। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করবে কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে, ‘আমরা সালাত আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’। ‘আর আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না’। ‘আর আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে (বেহুদা আলাপে) মগ্ন থাকতাম’। ‘আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম’। 'অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে'। অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন উপকার করবে না। আর তাদের কী হয়েছে যে, তারা উপদেশ বাণী হতে বিমুখ? [সূরা আল-মুদ্দাসসির/৭৪, আয়াতঃ ৩৫-৪৯]

মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারবনা? বস্তুতঃ আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনঃ বিন্যস্ত করতে সক্ষম। তবুও মানুষ তার সম্মুখে যা আছে তা অস্বীকার করতে চায়; সে প্রশ্ন করেঃ কখন কিয়ামাত দিবস আসবে? যখন চোখ ধাঁধিয়ে যাবে, চাঁদ হয়ে যাবে আলোকহীন। যখন সূর্য ও চাঁদকে একত্র করা হবে। সেদিন মানুষ বলবেঃ আজ পালানোর স্থান কোথায়? মোটেই না, আশ্রয়ের কোন জায়গা নেই। সেদিন ঠাঁই হবে (একমাত্র) তোমার প্রতিপালকেরই নিকট। সেদিন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হবে সে কী (‘আমাল) আগে পাঠিয়েছে আর কী পেছনে ছেড়ে এসেছে। [সূরাআল-ক্বিয়ামাহ/৭৫, আয়াতঃ৩-১৩]

(তোমরা যে ভাবছ ক্বিয়ামত হবে না সেটা) কক্ষনো নয়, প্রাণ যখন কণ্ঠে এসে পৌঁছবে, তখন বলা হবে, (তাকে বাঁচানোর জন্য) ঝাড়ফুঁক দেয়ার কেউ আছে কি? সে (অর্থাৎ মুমূর্ষু ব্যক্তি) মনে করবে যে, (দুনিয়া হতে) বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে। আর জড়িয়ে যাবে এক পায়ের নলা আরেক পায়ের নলার সাথে। সেদিন (সব কিছুর) যাত্রা হবে তোমার প্রতিপালকের পানে। কিন্তু না, সে বিশ্বাসও করেনি, নামাযও আদায় করেনি। বরং সে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তারপর সে দম্ভভরে পরিবার-পরিজনের কাছে চলে গিয়েছিল। দুর্ভোগ তোমার জন্য এবং দুর্ভোগ! অতঃপর তোমার জন্য দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। [সূরাআল-ক্বিয়ামাহ/৭৫, আয়াতঃ২৬-৩৫]

শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা (পাপীদের আত্মা) নির্মমভাবে টেনে বের করে, আর যারা (নেককারদের আত্মা) খুবই সহজভাবে বের করে, আর কসম দ্রুতগতিতে সন্তরণকারীদের। আর (আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য) ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে যায়, অতঃপর যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে। সেদিন প্রথম শিঙ্গাধ্বনি প্রকম্পিত করবে, ওকে অনুসরণ করবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। সেদিন অনেক হৃদয় ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। তাদের দৃষ্টি ভীতি বিহবলতায় অবনমিত হবে। তারা বলে, ‘আমাদেরকে কি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে? আমরা যখন পচা-গলা হাড় হয়ে যাব (তখনও)?তারা বলে, ‘অবস্থা যদি তাই হয় তাহলে এই ফিরিয়ে আনাটাতো সর্বনাশের ব্যাপার হবে। আর ওটা তো কেবল এক বিকট আওয়াজ। সহসাই তারা খোলা ময়দানে আবির্ভূত হবে। [সূরা আন-নাযিআত/৭৯, আয়াতঃ১-১৪]

তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে’? এর আলোচনার সাথে তোমার কি সম্পর্ক? এর প্রকৃত জ্ঞান তোমার রবের কাছেই। তুমিতো কেবল তাকেই সতর্ককারী, যে একে ভয় করে। যেদিন তারা তা দেখবে সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা বা এক সকালের বেশি অবস্থান করেনি। [সূরা আন-নাযিআত/৭৯, আয়াতঃ৪২-৪৬] 


অবশেষে যখন কান-ফাটানো শব্দ আসবে; সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে। সহাস্য, প্রফুল্ল। আর কিছু কিছু চেহারার উপর সেদিন থাকবে মলিনতা। কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে। তারাই কাফির, পাপাচারী। [সূরা আবাসা/৮০, আয়াতঃ ৩৩-৪২]

সূর্য যখন নিস্প্রভ হবে, আর তারকাগুলো যখন তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসে পড়বে। পর্বতগুলোকে যখন চলমান করা হবে, যখন দশ মাসের গর্ভবতী উটনিগুলোকে অযত্নে পরিত্যাগ করা হবে, আর যখন বন্য পশুগুলোকে একত্র করা হবে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে অগ্নিউত্তাল করা হবে। খন দেহের সঙ্গে আত্মাগুলোকে আবার জুড়ে দেয়া হবে, আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? আর যখন আমলনামাগুলো প্রকাশ করে দেয়া হবে। যখন আসমানের পর্দা সরিয়ে ফেলা হবে। আর জাহান্নামকে যখন প্রজ্জ্বলিত করা হবে। আর জান্নাতকে যখন নিকটবর্তী করা হবে। তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে সে কী (সঙ্গে) নিয়ে এসেছে। [সূরা আত-তাকবীর/৮১, আয়াতঃ১-১৪] 


যখন আসমান ফেটে যাবে, যখন তারকাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে (ঝরে) পড়বে, সমুদ্রকে যখন উত্তাল করে তোলা হবে, যখন কবরস্থ মানুষদেরকে উঠানো হবে, তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কী আগে পাঠিয়েছিল, আর কী পেছনে ছেড়ে এসেছিল। হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন, অতঃপর তোমাকে করেছেন ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছেমত আকৃতিতে গঠন করেছেন। না (তোমাদের এই বিভ্রান্তি মোটেই সঠিক নয়), তোমরা তো (আখেরাতের) শাস্তি ও পুরস্কারকে অস্বীকার করে থাক; অবশ্যই তোমাদের উপর নিযুক্ত আছে তত্ত্বাবধায়কগণ; সম্মানিত লেখকগণ (যারা লিপিবদ্ধ করছে তোমাদের কার্যকলাপ), তারা জানে তোমরা যা কর। নিশ্চয় সৎকর্মপরায়ণরা থাকবে সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দুস্কর্মকারীরা থাকবে জাহান্নামে; তারা সেখানে প্রবেশ করবে প্রতিদান দিবসে। [সূরা আল-ইনফিতার/৮২, আয়াতঃ১-১৫]

তারা কি চিন্তা করে না যে (তাদের মৃত্যুর পর) তাদেরকে আবার উঠানো হবে, এক মহা দিবসে ? যেদিন মানুষ বিশ্বজগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। (তারা যে সব ধারণা করছে তা) কক্ষনো না, নিশ্চয়ই পাপীদের ‘আমালনামা সিজ্জীনে (সংরক্ষিত) আছে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? সীলমোহরকৃত কিতাব। সেদিন ধ্বংস অস্বীকারকারীদের জন্য। [সূরাআল-মুতাফফিফীন/৮৩, আয়াতঃ৪-১০] 


পৃথিবী যখন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে, পৃথিবী তার (ভেতরের যাবতীয়) বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে, আর মানুষ বলবে, ‘এর কী হল?’ সে দিন পৃথিবী তার (নিজের উপর সংঘটিত) বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন, সেদিন মানুষ বের হবে ভিন্ন ভিন্ন দলে যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো যায়, অতএব কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সেও তা দেখবে। [সূরা আয-যিলযাল/৯৯, আয়াতঃ১-৮] 


মহা প্রলয়। মহা প্রলয় কী? মহা প্রলয় সম্বন্ধে তুমি কী জান? সে দিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। আর পর্বতগুলো হবে ধুনা রঙ্গিন পশমের মত। তঃপর যার (সৎ কর্মের) পাল্লা ভারি হবে। সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার (সৎকর্মের) পাল্লা হালকা হবে, (জাহান্নামের) অতলস্পর্শী গর্তই হবে তার বাসস্থান। আর তোমাকে কিসে জানাবে হাবিয়া কী? ওটা অতি উত্তপ্ত অগ্নি। [সূরা আল-কারিআ/১০১, আয়াতঃ১-১১] 


হাদিসের বর্ণনাঃ

সহীহ বুখারীঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের হাশর হবে তিন প্রকারে। একদল তো হবে আল্লাহ তা'আলার প্রতি আশিক ও দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত বান্দাদের। দ্বিতীয় দল হবে দু'জন, তিনজন, চারজন বা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী। আর অবশিষ্ট যারা থাকবে অগ্নি তাদেরকে একত্রিত করে নেবে। যেখানে তারা থামবে আগুনও তাদের সাথে সেখানে থামবে। তারা যেখানে রাত্রি যাপন করবে আগুনও সেখানে তাদের সাথে রাত্রি যাপন করবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে তাদের সাথে সকাল করবে। যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে আগুনেরও সেখানে সন্ধ্যা হবে। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৮/কোমল হওয়া, হাদিস নম্বরঃ ৬০৭৮]

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে শুনেছি তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে মুলাকাত করবে খালি গা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৮/কোমল হওয়া, হাদিস নম্বরঃ ৬০৮১]

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তখন তো পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে। তিনি বললেনঃ এইরূপ ইচ্ছা করার চাইতেও কঠিন হবে তখনকার অবস্থা। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৮/কোমল হওয়া, হাদিস নম্বরঃ ৬০৮৩] 


আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা কোন এক তাবুতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা বেহেশতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে, এটা কি তোমরা পছন্দ কর? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা বেহেশতীদের এক-তৃতীয়াংশ হবে, এটা কি তোমরা পছন্দ কর? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শপথ ঐ মহান সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদের প্রান। আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে, তোমরা বেহেশতীদের অর্ধেক হবে। আর এটা চিরন্তন সত্য যে বেহেশতে কেবলমাত্র মুসলমানগণই প্রবেশ করতে পারবে। আর মুশরিকদের মুকাবিলায় তোমরা হচ্ছ এমন, যেমন কাল ষাড়ের চামড়ার উপর শুভ্র (সাদা) পশম। অথবা লাল ষাড়ের চামড়ার ওপর কাল পশম। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৮/কোমল হওয়া, হাদিস নম্বরঃ ৬০৮৪]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা ডেকে বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, আমি তোমার খিদমতে হাযির। সমগ্র কল্যাণ তোমারই হাতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলবেন, জাহান্নামীদের (দেওয়ার জন্য) বের কর। আদম (আলাইহিস সালাম) আরয করবেন, কি পরিমাণ জাহান্নামী বের করব? আল্লাহ বলবেন, প্রতি এক হাজারে নয়শ, নিরানব্বই জন। বস্তুত এটা হবে ঐ সময়, যখন (কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা দর্শনে) বাচ্চা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। (আয়াতঃ) আর গর্ভবতীরা গর্ভপাত করে ফেলবে; মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন। (সূরা হাজ্জঃ ২)

এটা সাহাবাগণের কাছে বড় কঠিন মনে হল। তখন তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্য থেকে সেই লোকটি কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা এই মর্মে সুসংবাদ গ্রহণ কর যে ইয়াযুয ও মাযুয থেকে এক হাজার আর তোমাদের মাঝ থেকে হবে একজন। এরপর তিনি বললেনঃ শপথ ঐ মহান সত্তার, যার হাতের মুঠোয় আমার জান। আমি আকাঙ্ক্ষা রাখি যে তোমরা বেহেশতীদের এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যাও। বর্ননাকারী বলেনঃ এরপর আমরা আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার, বললাম। তিনি আবার বললেনঃ শপথ ঐ মহান সত্তার যার হাতে আমার জান। আমি অবশ্যই আশা করি যে তোমরা বেহেশতীদের অর্ধেক হয়ে যাও। অন্য সব উম্মাতের মাঝে তোমাদের তুলনা হচ্ছে কাল ষাড়ের চামড়ার মাঝে সাদা চুল বিশেষ। অথবা সাদা চিহ্ন, যা গাধার সামনের পায়ে হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৮/কোমল হওয়া, হাদিস নম্বরঃ ৬০৮৬] 


সহীহ মুসলিমঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুষ্টিতে নিয়ে নিবেন এবং আকাশমন্ডলী তাঁর ডান হস্তে গুটিয়ে নিবেন। অতঃপর তিনি বলবেন, আমিই বাদশাহ। পৃথিবীর বাদশাহগণ কোথায়? [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৯৩]

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নিবেন। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে ডান হস্তে ধরে বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় প্রতাপশালী লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হস্তে সমস্ত জমিন গুটিয়ে নিবেন এবং বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় প্রতাপশালী লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা? [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৯৪]

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ময়দার রুটির ন্যায় (বৃত্তাকার) লালচে সাদা যমীনের উপরে লোকদের একত্রিত করা হবে। সেখানে কারো কোন বিশেষ নিদর্শন বিদ্যমান থাকবে না। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৯৮] 


আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামকে আনা হবে। সেদিন তাতে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা উহা টেনে নিয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০১] 


আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মৃত্যু কে উপস্থিত করা হবে একটি সাদা মেষের আকারে। আবূ কুরায়ব অধিক বর্ণনা করেন, অতঃপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে দাঁড় করানো হবে। এরপর উভয়ই অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করেছেন। ...... তখন কেউ বলবে, হে জান্নাতীগন! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বলা হবে, হে জাহান্নামীগণ! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। অতঃপর আর্দেশ দেয়া হবে এবং উহাকে যবাহ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বলা হবে, হে জান্নাতীগণ! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল এখানে থাকবে। হে জাহান্নামীরা! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল (এখানেই থাকবে)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেনঃ “তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দাও-পরিতাপের দিবস সমন্ধে, যখন সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা গাফিল এবং তারা বিশ্বাস করে না।” এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দ্বারা দুনিয়ার প্রতি ইংগিত করলেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯১৮]

আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন লোকদেরকে একত্রিত করা হবে খালি পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পূরুষ এবং মহিলা এক সাথেই উত্থিত হবে কি? তবে তো তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি নযর করবে। অতঃপর তিনি বলেলেন, হে আয়িশা! তখনকার অবস্থা তারা একে অন্যের প্রতি দেখার অবস্থা থেকে কঠিন হবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৩৪] 


ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উপদেশ সম্বলিত ভাষণ দানের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান হয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সামনে খালি পা এবং নগ্নদেহ অবস্থায় উপস্থিত হবে। যেমন প্রথম দিন সৃষ্টি শুরু করেছিলাম, তেমনি তার পুনরাবৃত্তি করবো। এটা আমার একটা ওয়াদা, তা পালন অবশ্যই আমি (সম্পাদন) করব। শুনে রাখ, কিয়ামতের দিন সবার মাঝে সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কে পোশাক পরানো হবে। ওহে! আমার উম্মতের অনেক লোককে আনা হবে এবং তাদেরকে বাঁ দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আমর রব! এরা তো আমরে উম্মাত। জবাবে আমাকে বলা হবে, তুমি জানো না তোমার পরে এরা কত নতুন বিষয় উদ্ভাবন করেছিল। আমি তখন আল্লাহর নেক বান্দা [ঈসা (আঃ)] এর মত বলবো, এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ব বিষয়ে সাক্ষী, তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তখন বলা হবে, তুমি তাদের থেকে বিদায় গ্রহণের পর তারা সর্বদা মুখ ফিরিয়ে উল্টো পথে চলছিল। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৩৭]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লোকদেরকে তিন দলে বিভক্ত করে একত্রিত করা হবে। প্রথম দল (জান্নাতের) আশাবাদী এবং (জাহান্নামের ভয়ে) ভীত লোকদের দল। দ্বিতীয় দলে সে সব লোক যাদের দু'জন থাকবে এক উটৈর উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির উপর চারজন, আর কোনটির উপর সাওয়ার হবে দশজন। অবিশিষ্টদের আগুন তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাত্রিযাপন করবে আগুনও তাদের সঙ্গে রাত কাটাবে। তারা যেখানে দিবা শয়ন (বিশ্রাম) করবে আগুনও তাদের সাথে বিশ্রাম করবে। যেখানে তারা সকাল করবে আগুনও তাদের সাথে সকাল করবে। আর সেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে একই সঙ্গে আগুনও তাদের সাথে সন্ধ্যা করবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৩৮]

মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। ফলে তা মানুষের থেকে 'মীল; পরিমাণ দুরুত্বে চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু আমির (রহঃ) বলেন, আমি জানিনা, مِيل বলে কি বুঝানো হয়েছে, ভূমির দুরত্ব, না চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা। মানুষ তাদের আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে (ডুবন্ত) থাকবে। কেউ তার দুই গোড়ালি পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ তার দুই হাঁটু পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), কেউ কোমরের দুই পাশ পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), আর কারো মুখ পর্যন্ত লাগাম পরিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখের প্রতি ইশারা করলেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪২]

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট তার ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নাম। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার ঐ বাসস্থান যেথায় তুমি কিয়ামতের দিন প্রেরিত হবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৮] 


আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা তথা হতে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় তখন তার নিকট দু'জন ফিরিশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায়। অতঃপর তাকে তারা প্রশ্ন করে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে? মুমিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তাআলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন দেখে নেয়। বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে (দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে) সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ (শ্যামল গাছের) দ্বারা ভরপুর করে দেয়া হয় কিয়ামতে তাদের (মানুষের) উত্থিত হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৫২]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তির রুহ কবয করার পর দু'জন ফিরিশতা এসে তার রুহ ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে ঐ রুহের সুগন্ধি এবং মিশকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আকাশের বাসিন্দারা বলতে থাকে, কোন পবিত্রাত্না পৃথিবী হতে আগমন করেছে! আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আযাদকৃত শরীরের প্রতি রহমত নাযিল করুন। অতঃপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায় এবং তারা বলতে থাকে, তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও, কিয়ামত পর্যন্ত (তোমরা এখানেই বসবাস করবে)।

আর যখন কোন কাফির ব্যক্তির রুহ বের হয়- বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে তার দুর্গন্ধ এবং তার প্রতি অভিসম্পাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তখন আকাশের অধিবাসীরা বলতে থাকে, কোন খবীস আত্না পৃথিবী হতে এসেছে। অতঃপর বলা হল, তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। কিয়ামত পর্যন্ত তারা এখানেই বসবাস করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৫৭]

আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যারই হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কথা শুনে আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ কি সহজ হিসাবের কথা বলেন নি? তিনি বললেনঃ এ তো শুধু নামে মাত্র পেশ করা। কারণ যার হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৬৩] 


জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে তাকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি নেক ধারণা পোষণরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৬৫]

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক বান্দা কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্থিত হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৬৮]

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, আল্লাহ যখন কোন সম্প্রদায়কে আযাব দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন এ আযাব ঐ সম্প্রদায়ে অবস্থিত সকলকেই গ্রাস করে নেয়। অতঃপর কিয়ামতের দিন তাদের আমলের (নিয়তের) উপর উত্থিত হবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৭০]

সূনান তিরমিজীঃ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। [পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী, গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত], অধ্যায়ঃ ৩৫/কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয়, হাদিস নম্বরঃ ২৪১৬, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই বান্দার উপর আল্লাহ তা'আলা রাহমাত বর্ষণ করুন, যে তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে যুলুম করেছে। কিয়ামাত দিবসে এ ব্যাপারে তাকে পাকড়াও করার পূর্বেই যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ, সে স্থানে (আখিরাতে) দিরহাম, দীনারের (বিনিময় প্রদানের) ব্যবস্থা থাকবে না। সুতরাং তার কোন ভালো আমল থাকলে (যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী) তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর যদি কোন ভালো আমল না থাকে, তাহলে মাযলুমদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী, গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত], অধ্যায়ঃ ৩৫/কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয়, হাদিস নম্বরঃ ২৪১৯, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবূ বারযা আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার পা (কিয়ামতের দিন) নড়বে না যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে তার বয়স সম্পর্কে যে, কি কাজে সে তা শেষ করেছে; তার ইলম সম্পর্কে তদনুযায়ী কি আমল করেছে সে; তার সম্পদ সম্পর্কে কোথা সে তা অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে; তার শরীর সম্পর্কে সে কিসে তা বিনাশ করেছে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪২০, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান মুফলিস (কপর্দক শূণ্য ব্যক্তি) কে? সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের মাঝে মুফলিস তো হল সে ব্যক্তি যার কোন দিরহাম (মুদ্রা) নেই, কোন সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার উম্মতের মুফলিস হল সে ব্যক্তি যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত (নামায), সাওম যাকাত বহু আমলসহ উপস্থিত হবে, এরই সঙ্গে ওকে সে গালি-গালাজ করেছে, তাকে সে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের মাল আত্মসাত করেছে, তমুককে খুন করেছে, কাউকে মেরেছে ইত্যাদি ধরণের অপরাধসহও সে উপস্থিত হবে। অনন্তর তার নেক আমল থেকে অমুককে তমুককে বদলা দেওয়া হতে থাকবে। তার যিম্মায় সে সব অপরাধ আছে সে সবের বদলা নেওয়া শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি তার নেক আমল ফুরিয়ে যায় তবে ঐ সব মজলুম ব্যক্তিদের গুনাহসমূহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। শেষে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪২১, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ রহম করুন বান্দার উপর, যার যিম্মায় তার কোন ভাইয়ের সম্মান ও সম্পদ বিনষ্ট করার মত যুলুম জনিত অপরাধ রয়ে গেছে সে যেন এই অপরাধগুলো পাকড়াও হওয়ার আগেই মাফ করিয়ে নেয়। সেখানে (কিয়ামতের ময়দানে) কোন দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) বা কোর দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে (মযলুমের বদলায়) তবে নেক আমল নিয়ে যাওয়া হবে। আর তার যদি নেক আমল না থাকে তবে মযলুমদের বদ আমল এনে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪২২, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্য বান্দাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে এমন কি তা এক মাইল বা দুই মাইল বলতে যমীনের দুরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে না চোখে সুরমা লাগানো সলা বুঝানো হয়েছে জানি না। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সূর্যতাপে তারা গলতে থাকবে। তারা স্ব-স্ব আমল অনুসারে ঘামের প্রবাহে অবস্থান করবে। কারো তো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো দুই হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌছে লাগামের মত বেষ্টন করবে। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি তাঁর হাত দিয়ে মুখের দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ লাগামের মত বেষ্টন করাকে বুঝিয়ে দিলেন। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪২৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যার চুল-চেরা হিসাব নেওয়া হবে সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহ তো ইরশাদ করেছেনঃ

فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ * فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا

আর যার আমল নামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে তার হিসাব-নিকাশ তো সহজেই হবে। (সূরা ইনশিকাক ৮৪ঃ ৭,৮)। তিনি বললেনঃ এতো হল সামনে পেশ করা মাত্র। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪২৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি করে আনন্দ উপভোগ করতে পারি অথচ শিঙ্গাওয়ালা ফিরিশতা মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে রেখেছেন এবং কখন তাকে শিঙ্গা ফুৎকারের নির্দেশ দেওয়া হবে আর তখনই তিনি তাতে ফুৎকার দিবেন সে জন্য কান পেতে আছেন! সাহাবীদের বিষয়টি কঠিন ভীতিপ্রদ অনুভুত হল। তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা বল, حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا আল্লাহ্‌ই আমাদের জন্য যথেষ্ট, কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক তিনি। আল্লাহর উপর আমরা ভরসা করছি। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৩৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লা্হ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একবার কিছু গোশত আনা হল। তাঁর কাছে একটি সামনের রান তুলে ধরা হল। তিনি তা খেতে লাগলেন। সামনের গোশত তাঁর পছন্দনীয় ছিল। তিনি তা থেকে এক কামড় খেলেন। পরে বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমিই হলাম সকল মানুষের সর্দার। তোমরা কি জান তা কেন? শুরুর এবং শেষের সব মানুষকে আল্লাহ তাআলা একই মাঠে একত্রিত করবেন। একজনের ডাকই সকলের শ্রুত হবে এবং একজনের দৃষ্টিতেই সকলের পরিলক্ষিত হবে। সূর্য তাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে। এমন উদ্বেগ-পেরেশানী ও কষ্ট লোকদের হবে যা তাদের সহ্য হবে না এবং যা তারা বইতেও পারবে না। লোকদের একজন আরেকজনকে বলবে তোমাদের কি যাতনা পৌছছে লক্ষ্য করছ না? এমন কাউকে দেখছ না যিনি তোমাদের প্রভুর কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন।

লোকেরা পরস্পর পরস্পরকে বলবেঃ চল, আদম (আঃ)-কে গিয়ে ধর। তারা আদম (আঃ)-এর কাছে আসবে। বলবে, আপনি মানবকুলের আদি পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আপনার মাঝে রূহ ফুঁকেছেন, ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাই তারা আপনার সিজদা করেছিল। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর দরবারে সুপারিশ করুন। আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আপনি কি দেখছেন না কষ্টের কোন সীমায় আমরা পৌছেছি?

আদম (আঃ) তাদের বলবেনঃ আমার পরওয়ারদিগার তো আজ এমন ক্রোধান্বিত যে পূর্বেও কখনো এমন ক্রোধান্বিত হয়নি ভবিষ্যতেও কখনো এমন ক্রোধান্বিত হবেন না। তিনি তো আমাকে একটি বৃক্ষ সম্পর্কে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু আমি তা লংঘন করে ফেলেছি, নাফসী, নাফসী, নাফসী-আজ আমার চিন্তাই আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা নূহের কাছে যাও।

তারা নূহ (আঃ) এর নিকট আসবে। বলবেঃ হে নূহ, আপনি পৃথিবীর প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে ’‘আবদান শাকুরা’’ চিরকৃতজ্ঞ বান্দা বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?

নূহ (আঃ) তাদের বলবেনঃ আমার পরওয়ারদিগার তো আজ এমন ক্রোধান্বিত যে পূর্বেও কখনো এমন ক্রোধান্বিত হয়নি ভবিষ্যতেও এমন ক্রোধান্বিত আর কখনো হবেন না। তিনি আমাকে একটি দুআ কবূলের প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন। তা আমি আমার কওমের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী আজ আমার চিন্তায়ই আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে যাও।

তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে আসবে। বলবেঃ হে ইবরাহীম, আপনি আল্লাহর নাবী, পৃথিবীবাসীদের মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?

ইবরাহীম (আঃ) তাদের বলবেনঃ আমার পরওয়ারদিগার আজ এত ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে আগেও এমন ক্রোধান্বিত কখনও হন নাই আর পরেও কখনও এমন ক্রোধান্বিত হবেন না। আমার পক্ষ থেকে তিনটি (বাহ্যিক) অসত্য কথন হয়ে গিয়েছিলেন। নাফসী, নাফসী, নাফসী আজ আমার চিন্তায়ই আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা মূসার কাছে যাও।

তারা মূসা (আঃ)-এর কাছে আসবে। বলবেঃ হে মূসা, আপনি আল্লাহর রাসূল, তিনি আপনাকে তাঁর রিসালাত ও কালাম প্রদান করে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?

মূসা (আঃ) বলবেনঃ আমার পরওয়ারদিগার আজ এত ক্রেধান্বিত অবস্থায় আছেন যে আগেও এমন ক্রোধান্বিত কখনও হন নাই আর পরেও কখনও এমন ক্রোধান্বিত হবেন না। আমি তাঁর হুকুম ছাড়াই এক ব্যক্তিকে কতল করে ফেলেছিলাম; নাফসী, নাফসী, নাফসী আজ আমার চিন্তায়ই আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা ঈসার নিকট যাও।

এরপর তারা ঈসা (আঃ)-এর নিকট আসবে; বলবেঃ হে ঈসা, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি আল্লাহর দেওয়া বাণী যা তিনি মারইয়াম (আঃ)-এর গর্ভে ফেলেছেন; আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা, দোলনায় অবস্থানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যলাপ করেছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?

ঈসা (আঃ) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রেধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরূপ ক্রোধান্বিত পূর্বে কখনও ছিলেন না এমন ক্রোধান্বিত কখনও হবেন না। উল্লেখ্য যে, ঈসা (আঃ) এখানে নিজের কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। নাফসী, নাফসী, নাফসী আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও, তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও।

তখন তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসবে। বলবেঃ হে মুহাম্মদ, আপনি আল্লাহর রাসূল, শেষ নাবী, মাফ করে দেওয়া হয়েছে আপনার পূর্বেকার সব ত্রুটি। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য শাফা‘আত করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কোন অবস্থায় আছি?

এরপর (আমি সুপারিশ করার জন্য) যাব এবং আরশের নীচে এসে আমার পরওয়ারদিগারের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হব। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য তাঁর হামদ ও সর্বোত্তম প্রশংসার এমন কিছু উদ্ভাসিত করে দিবেন যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য উদ্ভাসিত করা হয়নি। অতঃপর বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ, আপনার মাথা উত্তোলন করুন। প্রার্থনা করুন আপনার প্রার্থনা কবূর করা হবে, শাফা‘আত করুন, আপনার শাফা‘আত গ্রহণ করা হবে।

অনন্তর আমি মাথা তুলব। বলবঃ হে পরওয়ারদিগার, আমার উম্মতকে রক্ষা করুন।

আল্লাহ বলবেনঃ হে মুহাম্মদ, আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব নাই তাদেরকে জান্নাতের দরওয়াজা ডানদিকের দরওয়াজা দিয়ে জান্নাতে দাখিল করে দিন। অবশ্য অন্যান্য দরওয়াজার ক্ষেত্রেও তারা অপরাপর লোকদের সঙ্গেও জান্নাতে দাখিল করতে পারবে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ কসম সেই যাতের যাঁর হাতে আমার প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দুরত্ব মক্কা ও হাজারের দুরত্বের মত এবং মক্কা ও বুসরার দুরত্বের মত। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৩৭, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কবীরাগুনাহকারীদের জন্য আমার শাফা‘আত রয়েছে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৩৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আওফ ইবন মালিক আশজাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার প্রভুর থেকে আগন্তুক আমার কাছে এলেন এবং আমার অর্ধেক উম্মতকে জান্নাতে প্রবেশ করানো এবং শাফা‘আত করার অধিকার এ দুইটির একটির গ্রহণের আমাকে ইখতিয়ার দিলেন। আমি শাফা‘আত করার অধিকারকেই আমি ইখতিয়ার করলাম। এ শাফা‘আত হল তার জন্য যে আল্লাহর সঙ্গে সে কোন কিছু শরীক না করা অবস্থায় মারা গেছে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, হাওযের পাত্রের পরিমাণ কি? তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, হাওযের পাত্র হবে জান্নাতের পাত্র এবং তার সংখ্যা হবে মেঘমুক্ত আধাঁর রাতের তারার চেয়েও বেশী। এ থেকে যে ব্যক্তি পানি পান করবে সে আর পিপাসার্ত হবে না। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্ত সমান। তা হল আম্মান থেকে আয়লা পর্যন্ত বড়। এর পানি দুধ থেকেও সাদা এবং মধু থেকেও মিঠা। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য একটি চতুর্ভূজ চিত্র আকলেন। চতুর্ভুজটির মধ্যভাগে একটি রেখা টানলেন। আর চতুর্ভুজটির সীমা অতিক্রম করে একটি রেখা টানলেন। আর মাঝের রেখাটির চতুর্থাংশে অনেকগুলি রেখা টানলেন। পরে বললেনঃ এ হল আদম সন্তান আর এটি হল তার জীবন-সীমা যা তাকে পরিবেষ্টন করে আছে। এই মাঝের রেখাটি হল মানুষ আর এর পার্শ্বের রেখাগুলো হল তার আপদ-বিপদ। একটি থেকে যদি সে মুক্তি পায় তবে আরেকটি তাকে কামড়ে ধরে। (সীমা অতিক্রমকারী) রেখাটি হল মানুষের আখাঙ্খা। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৫৭, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তান বৃদ্ধ হয় আর দু‘টো জিনিস তার মধ্যে জওয়ান হয়-সম্পদের মোহ এবং বাঁচার লোভ। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৫৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং আমির ইবন লুওয়াই গোত্রের হালীফ আমর ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে (বাহরাইনের দিক) প্রেরণ করেন। পরে তিনি বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে ফিরে আসেন। আনসারী সাহাবীরা আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহ-এর আগমনের সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ফজরের সালাতে এসে শামিল হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর যখন ঘুরে বসলেন তখন তারা সবাই তাঁর সামনে এসে গেলেন। তাদের দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য হাসলেন। বললেনঃ আমার মনে হয় আবূ উবায়দা কিছু নিয়ে এসেছেন বলে তোমরা শুনেছ? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল।

তিনি বললেনঃ তোমরা খোশ খবরী গ্রহণ কর, তোমাদের যা আনন্দিত করবে এমন বিষয়ের আশা পোষণ কর। আমি তোমাদের দারিদ্রের আশা করি না। আমি তো আশংকা করি যে, তোমাদের পূর্ববর্তীতের জন্য যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল তোমাদের জন্য তেমনি ভাবে দুনিয়া বিস্তৃত করে দেওয়া হবে। অনন্তর তারা যেমন এর প্রতিযোগীতায় মত্ত হয়েছিল তোমরাও সেভাবে এর প্রতিযোগীতায় মত্ত হবে। শেষে এ যেমন তাদের ধ্বংস করেছিল তেমনি তা তোমাদেরও ধ্বংস করবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৬৫, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতে আল্লাহ্ তা’আলা সব মানূষকে একই ময়দানে জমায়েত করবেন। এরপর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাদের সম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করবেন। বলবেনঃ শোন, (পৃথিবীতে) যে যার অনুসরণ করে চলতো আজ সে তারই অনুসরণ করে চলবে। এরপর ক্রুশ অনুসারীদের জন্য ক্রুশ, মূর্তী পূজকদের জন্য তাদের মূর্তিসমূহ, অগ্নি উপাসকদের জন্য অগ্নি উপস্থাপিত হবে এবং প্রত্যেকেই স্ব স্ব মা’বুদের পেছনে চলবে। অবশেষে কেবল মুসলিমরাই অবশিষ্ট থাকবে। তখন রাব্বুল আলামীন তাদের সামনে প্রকাশিত হবেন। বলবেনঃ তোমরা অন্যান্য লোকদের অনুসরণ করলে না কেন?

মুসলিমরা বলবেঃ নাউযুবিল্লাহ্, আল্লাহর কাছে আমরা পানাহ চাই, আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আল্লাহ্ই আমাদের রব। আমাদের রবকে না দেখা পর্যন্ত এখানেই আমরা অবস্থান করব। তখন তিনিই তাদের নির্দেশ দিবেন এবং সুদৃঢ় রাখবেন। এরপর তিনি অন্তরালে চলে যাবেন। আবার তিনি প্রকাশিত হবেন। বলবেনঃ তোমরা অন্যান্য লোকদের অনূসরণ করলে না কেন? তারা বলবেঃ নাউযুবিল্লাহ্, আল্লাহর কাছে আমরা পানাহ চাই, আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আল্লাহ্ই আমাদের রব। আমাদের রবকে না দেখা পর্যন্ত এখানেই আমরা অবস্থান করব। তখন তিনিই তাদের নির্দেশ দিবেন এবং সুদৃঢ় রাখবেন।

সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কি তাঁকে দেখব? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের একজন আরেকজনকে কষ্ট দিতে হয়? তাঁরা বললেনঃ না, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেনঃ ঐ সময় তাঁকে দেখতেও তোমাদের কোন ধাক্কাধাক্কি হবে না।

অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা অন্তরালে চলে যাবেন। পরে আবার প্রকাশিত হবেন এবং নিজের পরিজয় জ্ঞাপন করবেন। বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব। আমার পেছনে তোমরা চল। মুসলিমরা উঠে দাঁড়াবে। পুল-সিরাত স্থাপন করা হবে। এর উপর দিয়ে দ্রুতগামী অশ্ব ও উষ্ট্রের ন্যায় তারা অতিক্রম করে যাবে। তাদের ধ্বনি হবে’‘সাল্লিম সাল্লিম’’ রক্ষা কর, রক্ষা কর। জাহান্নামীরা বাকী থেকে যাবে। তাদের এক বিরাট বাহিনীকে এতে নিক্ষেপ করা হবে। পরে জাহান্নামকে বলা হবে, তোর পেট ভরেছে কি? জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? এরপর এতে আরো একদল নিক্ষেপ করা হবে। বলা হবেঃ তোর ভরেছে কি? জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি?

এরপর এতে আরো একদল নিক্ষেপ করা হবে। বলা হবেঃ তোর ভরেছে কি? জাহান্নাম বলবেঃ আরো আছে কি? যখন তাতে সব কিছু ভরা শেষ হয়ে যাবে তখন দয়াময় রহমান তাতে তাঁর পা স্থাপন করবেন। এটি পরস্পর সংকুচিত হয়ে যাবে। পরে তিনি বলবেনঃ হলো তো। জাহান্নাম বলবঃ কাত কাত - হয়েছে হয়েছে।

আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে দাখিল করে দিবেন। তখন মওতকে গলায় কাপড় বেঁধে টেনে নিয়ে আসা হবে এবং জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মাঝে অবস্থিত প্রাচীরে সেটিকে রাখা হবে। পরে ডাক দেয়া হবে। হে জান্নাতবাসীগণ! তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নিজ নিজ আবাস থেকে বের হয়ে আসবে। পরে ডাক দেয়া হবে, হে জাহান্নামবাসীগণ! তারা শাফাআতের আশায় আশান্বিত হয়ে খুশীতে নিজ নিজ আবাস থেকে বের হয়ে আসবে। যা হোক, পরে জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের বলা হবেঃ তোমরা এটাকে চিন?

এরা ওরা সবাই বলবেঃ আমরা একে চিনেছি। এ-ই হল মৃত্যু যা আমাদের উপর ন্যাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পরে এটি শোয়ানো হবে এবং ঐ প্রাচীরের উপর এটিকে যবেহ করে দেওয়া হবে। এরপর বলা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! অনন্তকালের জন্য হল তোমাদের এই জান্নাত, মৃত্যু নেই আর। হে জাহান্নামবাসীগণ! অনন্তকালের জন্য হল তোমাদের এই জাহান্নাম, মৃত্যু নেই আর। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৫৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ফুরাত নদী তার গোপন স্বর্ণ-ভন্ডার পানি অপসৃত করে প্রকাশ করে দিবে। যে ব্যক্তি তখন সেখানে হাযির থাকবে সে যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৭০, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আল-লুলু ওয়াল মারজানঃ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামাত দিবসে মৃত্যুকে একটি ধূসর রঙের মেষের আকারে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তারা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবেন হ্যাঁ, এ হল মৃত্যু। কেননা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে, তখন সম্বোধনকারী বলবে তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কেননা তারা সকলেই তাকে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে। আর ঘোষক বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে (এখানে) থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন। (এখানে) থাক। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন- ‘তাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে যখন সকল ফয়সালা হয়ে যাবে অথচ এখন তারা গাফিল, তারা অসতর্ক দুনিয়াবাসী-অবিশ্বাসী। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮১১, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে। তিনি বললেনঃ এরূপ ইচ্ছে করার চেয়েও কঠিন হবে তখনকার অবস্থা। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮১৭, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। এরপর বললেনঃ নিশ্চয়ই আমাদের হাশর করা হবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়। আয়াতঃ "যেভাবে আমি প্রথমবার সষ্টি করেছি তেমনিভাবে করব।" আর কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আঃ)-কে পোশাক পরিধান করানো হবে। আমার উম্মাত থেকে কিছু লোককে আনা হবে আর তাদেরকে আনা হবে বামওয়ালাদের (বাম হাতে ‘আমলনামা প্রাপ্ত) ভিতর থেকে। তখন আমি বলব, হে প্ৰভু! এরা তো আমার উম্মাত। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলবেনঃ নিশ্চয়ই তুমি জান না তোমার পরে এরা কী করেছে। তখন আমি আরয করব, যেমন আরয করেছে নেক্‌কার বান্দা অর্থাৎ ঈসা (আঃ)। (وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ) হতে (الْحَكِيمُ) পর্যন্ত; অর্থাৎ যতদিন আমি ছিলাম আমি তাদের ওপর সাক্ষী ছিলাম ... পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর জবাব দেয়া হবে। এরা সর্বদাই দীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শনের ওপর বিদ্যমান ছিল। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮১৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামাতের দিন মানুষের হাশর হবে তিন প্রকারে। একদল তো হবে আল্লাহ্ তা'আলার প্রতি আশিক ও দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত বান্দাদের। দ্বিতীয় দল হবে দু’জন, তিনজন, চারজন বা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী। আর অবশিষ্ট যারা থাকবে অগ্নি তাদেরকে একত্রিত করে নেবে। যেখানে তারা থামবে আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থামবে। তারা যেখানে রাত্রি যাপন করবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে রাত্রি যাপন করবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে সকাল করবে। যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে আগুনেরও সেখানে সন্ধ্যা হবে। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮১৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। “যেদিন সব মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।” (সূরা মুতাফফিফীন ৮৩/৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তির কানের লতা পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন মানুষের ঘাম হবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত ছাড়িয়ে যাবে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত হবে; এমনকি কান পর্যন্ত। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২১, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়)। আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি (এভাবে দেখানো হয়)। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২২, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ্ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দু'টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু'মিন ব্যক্তিকে যখন তার কবরে বসানো হয় তখন উপস্থিত করা হয় ফেরেশতাগণকে। অতঃপর (ফেরেশতাগণের প্রশ্নের উত্তরে) সে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, “আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।” এটা আল্লাহর কালামঃ (যার অর্থ “আল্লাহ্ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে, প্রতিষ্ঠিত বাণীতে”- (সূরা ইব্রাহীমঃ ২৭)। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২৫, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ্ তা’আলা কোন কাওমের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকলের উপরই সেই আযাব নিপতিত হয়। অবশ্য পরে (কিয়ামাতের দিন) প্রত্যেককে তার আমাল অনুসারে উঠানো হবে। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮২৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

বারা ইবনু আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায় বের হলাম, আমরা তার কবরে পৌঁছলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবসলেন আমরা তার চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে, তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়তে ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেন: “তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও, দুইবার অথবা তিনবার (বললেন)”। অতঃপর বললেন: “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য। তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেন: হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেন: “ফলে রুহ বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়”। তিনি বললেন: “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেন: আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাব”। তিনি বলেন: “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে: আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর বলবে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে: তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর তারা বলবে: কিভাবে জানলে? সে বলবে: আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবে: আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন: তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবে: সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার নেক আমল। সে বলবে: হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। তিনি বলেন: “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকে ‘মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর বলেন: হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেন: ফলে সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) সিক বের করা হয় [কারণ ভেজা উল সাধারণত: লোহার সাথে লেগে থাকে। তখন তা ছাড়িয়ে নেয়া কষ্টকর হয়। - সম্পাদক], অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ ‘মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না”। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতিলাওয়াত করেন:


﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠]


“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না ‎এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ‎উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে”। ‎[সূরা আল-আরাফ, আয়াতঃ৪০] ‎অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:

﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ [الحج : ٣١]

“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন ‎আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ ‎‎মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোন ‎জায়গায় নিক্ষেপ করল”। [সূরা হজ্জ, আয়াতঃ৩১] ‎তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে: তোমার রব কে? সে বলে: হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলে: তোমার দ্বীন কি? সে বলে: হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে: হা হা আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবে: তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবে: হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”। [পাবলিশারঃ ইসলাম হাউস, সহীহ হাদিসে কুদসি, অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ, হাদিস নাম্বারঃ৬৬]


আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃতকে যখন কবরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার, অপর একজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক দু’জন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন কবরবাসী বলবে, (না,) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। অতঃপর সে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে ‘আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে) আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন। [মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),অধ্যায়ঃ পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস),পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি, হাদিস নম্বরঃ ১৩০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

ব্যাখ্যা: (إِذَا اُقْبِرَ الْمَيِّتُ) ‘যখন মৃতকে কবর দেয়া হয়’ এটা বলা হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মের উপর খেয়াল করে। নচেৎ মৃত ব্যক্তি বলতে তো সব মৃত ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। অথচ সব মৃত্যুকে কবর দেয়া হয় না। এখানে কবর বলতে বারযাখী জীবনে পদার্পণ করা, চাই সে মাটিতে হোক কিংবা মাছের পেটে হোক অথবা আগুনেই পুড়ে যাক।

(الْمُنْكَرُ وَالْاۤخَرُ النَّكِيرُ) ‘‘মুনকার তাকে বলা হয় যে কাউকে চিনে না। আর নাকীর তাকে বলা হয় যাকে কেউ চিনে না। এ মালাক (ফেরেশতা) দু’জনের নাম মুনকার ও নাকীর এজন্য রাখা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি তাদের কাউকেই চিনে না। তাদের ‘‘আকৃতির’’ মতো আকৃতি কখনো দেখেনি। কিছু কিছু ‘আলিমগণ বলেন যে, গুনাহগারদের প্রশ্নকারী মালাকের নাম মুনকার ও নাকীর। আর নেক্কার বান্দাদের প্রশ্নকারী মালায়িকাহ্’র নাম মুবাশ্বির ও বাশীর।

(فَيَقُوْلَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هذَا) অর্থাৎ- মালায়িকাহ্’র কথাঃ ‘‘আমরা আগেই জানতাম যে, তুমি এ উত্তরই দিবে’’। প্রশ্ন হলো তারা কিভাবে জানতে পারলো যে, মৃত ব্যক্তি এই উত্তর দিবে? উত্তর হলো, আল্লাহ তা‘আলার জানানোর মাধ্যমে অথবা তার কপালে যে সৌভাগ্যের চিহ্ন আছে তা অবলোকন করে। যেমন ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) হাদীস নিয়ে এসেছেন ‘‘মু’মিন হলে তার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার মাথার নিকট তার যাকাত তার ডানে, তার সওম তার বামে অবস্থান করে।’’

(يُفسَحُ لَهٗ فِيْ قَبْرِه سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ) ‘‘তার কবরকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে’’। বলা হয়ে থাকে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, মৃতের কবর অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে। যেমন- কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- مد بصره‘‘তার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে।’’ এও হতে পারে যে, এ প্রশস্ততা ‘আমালকারীর ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হবে।

(سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قَوْلًا فَقُلْتُ مِثْلَهٗ لَا أَدْرِى) ‘‘লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না।’’ অর্থাৎ- লোকেদেরকে আমি বলতে শুনতাম যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নাবী তাই আমিও বলতাম যে, তিনি নাবী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি জানতাম না যে, তিনি নাবী কি-না।

(فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ) ‘‘জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও।’’ অর্থাৎ- তুমি তার ওপর একত্রিত হয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাও।

فَتَخْتَلِفُ أَضْلَاعُهٗ ‘‘তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে।’’ অর্থাৎ- জমিন তার উপর এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করবে যে, পাঁজরের হাড়গুলো যেভাবে ছিল সেভাবে আর থাকবে না। বরং চাপের আধিক্যের কারণে পাঁজরের এক পাশের হাড় অন্যপাশের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করবে। আর এ চেপে যাওয়াটা বাস্তবেই ঘটবে তা কোন ধারণা বা কল্পনা নয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

ঈমান

ঈমান সম্পর্কিত নিচের হাদিসগুলো মুসলিম মাত্রই জানা অত্যন্ত জরুরী। আসুন তাহলে শুরু করি - ঈমান ও ইসলামঃ আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ...