Monday, June 24, 2019

জান্নাত ও জান্নাতীদের বর্ণনাঃ-

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুমিন মাত্রই জান্নাতের আশা করবে এটাই স্বাভাবিক। আসুন কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি এবং নিজেদেরকে সেই অনুযায়ী তৈরি করি যেন একজন প্রকৃত মুমিন মুসলিম হওয়া যায়।

কুরআনের বর্ণনাঃ-
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তাদেরকে যখনই ফলমূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হতো, এতো তারই মতো। একই রকম ফল তাদেরকে দেয়া হবে এবং সেখানে রয়েছে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিণী, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। [সূরা আল-বাকারা/২, আয়াতঃ ২৫]

আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব বিস্তৃত ঘন ছায়ায়। [সূরা আন-নিসা/৪, আয়াতঃ৫৭]

যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে এমন কোন ব্যক্তিকে আমি তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করিনা - তারাই হবে জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেব, তাদের পাদদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে, আর তারা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে এ পথ দেখিয়েছেন, আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না যদি না আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখাতেন। আমাদের প্রতিপালকের রসূলগণ প্রকৃত সত্য নিয়েই এসেছিলেন। তাদেরকে আহবান করে জানানো হবে- ‘তোমরা (দুনিয়াতে) যে ‘আমাল করতে তার ফলে তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ।’ জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে যে, ‘আমাদেরকে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়া‘দা দিয়েছিলেন তা আমরা ঠিক ঠিক পেয়েছি। আর তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়া‘দা ঠিক মত পেয়েছ?’ তারা বলবে, ‘হাঁ’। তখন একজন ঘোষণাকারী তাদের মাঝে ঘোষণা করবে যে, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ যারা আল্লাহর পথে চলতে (মানুষকে) বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করত তারা পরকালকেও অস্বীকার করত। [সূরা আল-আরাফ/৭, আয়াতঃ৪২-৪৫]

আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা। [সূরা আত-তাওবা/৯, আয়াতঃ৭২]

যারা সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য উত্তম বস্তু (জান্নাত) রয়েছে; এবং অতিরিক্ত কিছুও বটে; আর না তাদের মুখমন্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে, আর না অপমান; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল থাকবে। [সূরা ইউনুস/১০, আয়াতঃ ২৬]

তা হল স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে। আর তাদের পিতৃ পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানাদির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফেরেশতারা সকল দরজা দিয়ে তাদের কাছে হাযির হয়ে সংবর্ধনা জানাবে (এই বলে যে)- ‘‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না উত্তম পরকালের এই ঘর!’’ [সূরা আর-রাদ/১৩, আয়াতঃ২৩-২৪]

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে। [সূরা ইবরাহীম/১৪, আয়াতঃ ২৩]

অবশ্যই মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে আর নির্ঝরিণীগুলোর মধ্যে। তাদেরকে বলা হবে, ‘পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তোমরা এতে প্রবেশ কর।’ তাদের অন্তর থেকে আমি বিদ্বেষ দূরীভূত করব, তারা ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসনে মুখোমুখী সমাসীন হবে। কোন ক্লান্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে না, আর সেখান থেকে তারা কখনও বহিষ্কৃতও হবে না। [সূরা আল-হিজর/১৫, আয়াতঃ৪৫-৪৮]

(তা হল) স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে, তার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা যা ইচ্ছে করবে সেখানে তাদের জন্য তা-ই আছে- আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করেন। [সূরা আন-নাহল/১৬, আয়াতঃ৩১]


যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি, যে সৎ কাজ করে আমি তার কর্মফল নষ্ট করিনা। তাদের জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ কংকণে। সূক্ষ্ম ও গাঢ় রেশমের সবুজ পোশাক তারা পরিধান করবে। তারা গদি লাগানো উচ্চাসনে হেলান দিয়ে বসবে। কতই না উত্তম পুরস্কার! কতই না উত্তম আশ্রয়স্থল! [সূরা আল-কাহফ/১৮, আয়াতঃ৩০-৩১] 


তা চিরস্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন গায়েবের সাথে। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদাকৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী। তারা সেখানে ‘শান্তি’ ছাড়া কোন অর্থহীন কথা শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে তাদের রিয্ক। সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যারা মুত্তাকী। [সূরা মারিয়াম/১৯, আয়াতঃ৬১-৬৩]

আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল যারা পরিশুদ্ধ হয় তাদের পুরষ্কার। [সূরাত্ব-হা/২০, আয়াতঃ৭৫-৭৬]

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন আর মুক্তা দিয়ে আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। তাদেরকে (দুনিয়ার জীবনে) পথ দেখানো হয়েছিল পবিত্র বাক্যের (অর্থাৎ কালিমা তাইয়্যেবা বা আল-কুরআনের) দিকে আর তারা পরিচালিত হয়েছিল তাঁর পথে যিনি সকল প্রশংসার দাবীদার। [সূরা আল-হজ্জ/২২, আয়াতঃ২৩-২৪] 


অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি; তবে তাদের কেহ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেহ মধ্য পন্থী এবং কেহ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রগামী। এটাই মহা অনুগ্রহ। তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ নির্মিত কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক পরিচ্ছদ হবে রেশমের। আর তারা বলবে- যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। আমাদের প্রতিপালক অবশ্যই পরম ক্ষমাশীল, (ভাল কাজের) বড়ই মর্যাদাদানকারী। যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন। সেখানে ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না, ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না। [সূরা ফাতির/৩৫, আয়াতঃ৩২-৩৫]

আরো স্মরণ কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘আ ও যুল-কিফলের কথা। এরা প্রত্যেকেই ছিল সর্বোত্তমদের অন্তর্ভুক্ত। এটা এক স্মরণীয় বর্ণনা এবং মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস – চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ থাকবে তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা হেলান দিয়ে আসীন থাকবে, সেখানে তারা বহু ফলমূল ও পানীয় চাইবে। আর তাদের পাশে থাকবে আনত নয়না সমবয়স্কা তরুণীরা। এসব হল যা তোমাদেরকে হিসাবের দিনে দেয়ার ওয়া‘দা দেয়া হচ্ছে। নিশ্চয় এটি আমার দেয়া রিয্ক, যা নিঃশেষ হবার নয়। [সূরা সয়াদ/৩৮, আয়াতঃ৪৯-৫৪] 


যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, অতএব যারা তাওবাহ করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। হে আমাদের রাব্ব! আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের মাতা-পিতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কাজ করেছে তাদেরকেও। আপনিতো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব থেকে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য। [সূরা গাফির/৪০, আয়াতঃ৭-৯] 


হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম আবাসগুলোতেও (প্রবেশ করবেন)। এটাই মহাসাফল্য। এবং আরো একটি (অর্জন) যা তোমরা খুব পছন্দ কর। (অর্থাৎ) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়ামের পুত্র ‘ঈসা হাওয়ারীদেরকে বলেছিল- ‘আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে?’ হাওয়ারীরা উত্তরে বলেছিল- ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী (হব)।’ অতঃপর বানী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল, আরেক দল প্রত্যাখ্যান করল। তখন যারা ঈমান আনল তাদেরকে আমি তাদের শত্রুদের উপর শক্তিশালী করলাম। ফলে তারা বিজয়ী হল। [সূরা আস-সাফ/৬১, আয়াতঃ১০-১৪] 


নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে। [সূরাআল-বায়্যিনাহ/৯৮, আয়াতঃ৭-৮]

হাদিসের বর্ণনাঃ-

সহীহ মুসলিমঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামের তালিকাভুক্ত (উপযোগী) দুনিয়ায় সর্বাধিক সাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আনা হবে। তারপর তাকে (জাহান্নামের) আগুনে একটি ডুব দিয়ে বলা হবে, হে আদম সন্তান! দুনিয়াতে আরাম-আযেশ কখনো তুমি দেখেছো কি, কখনো তুমি সাচ্ছন্দ অবস্থায় দিনাতিপাত করেছো কি? সে বলবে, আল্লাহর কসম! হে আমার প্রতিপালক! না, কখনো দেখিনি। তারপর জান্নাতের তালিকাভুক্ত (উপযোগী) দুনিয়ায় সর্বাধিক খারাপ অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তিকে আনা হবে। তারপর তাকে জান্নাতে একবার অবগাহন করিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, হে আদম সন্তান! কখনো তুমি কষ্ট দেখেছো কি, কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় দিনাতিপাত করেছো কি? সে বলবে, আল্লাহর কসম, হে আমার প্রতিপালক! কখনো আমি কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করিনি এবং দুঃখ কখনো দেখিনি। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮২৯]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমিও নই। তবে আমার পালনকর্তা যদি তার অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৫২]

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন তখন এমনভাবে কিয়াম করতেন যে, এতে তার উভয় পদযুগল ফেটে যেতো। এ দেখে আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এরূপ করছেন কেন? অথচ পূর্বাপর আপনার সমুদয় বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হে আয়িশা, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৩/কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৬৫]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে কামনা-বাসনা বস্তু দ্বারা। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৬৯]


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। আল-কুরআনে এর সত্যায়ন রয়েছে "কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।" (সূরা সাজদাঃ ১৭) [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৭১] 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করতে পারবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৭৫]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার নিকটে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তর দেবে, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছিল যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে রব! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবতরণ (স্থাপন) করব। এরপর তোমাদের উপর আমি আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৭৮]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানাসমূহ দেখতে পাবে, যেমন অস্তগামী (দূরবর্তী) উজ্জ্বল তারকা তোমরা আকাশের পৃর্ব বা পশ্চিম দিগন্তে দেখতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরে মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে। (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ স্তরসমুহ তো নবীদের জন্য নির্দিষ্ট। তাদের ব্যতীত অন্যেরা তো এ স্তরে কখনো পৌছতে পারবে না। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ আমি তাঁর কসম (করে বলছি)! যে সমস্ত লোক আল্লাহতে ঈমান আনয়ন করেছে এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছে, (তারা সকলেই এ মর্যাদা সম্পন্ন স্তরসমূমুহে অবস্থান করতে সক্ষম হবে)। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৮১]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমআয় (সপ্তাহে) জান্নাতী লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমন্ডল ও কাপড় চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের রূপ ও সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের নিকট ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্য বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্য বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৮৩] 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথমে যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। তাদের পর যারা (জান্নাতে প্রবেশ করবে) তাদের চেহারা আকাশের অতিশয় উজ্জ্বল তারকারাজির ন্যায় হবে। তারা পেশাব-পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না এবং নাক ঝাড়বেনা। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে এবং তাদের আংটি হবে 'ধুপদানী' হবে আগর কাষ্ঠের তৈরী। তাদের স্ত্রীরা হবে আয়তলোচনা হুর। তাদের চরিত্র হবে একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায়। আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি হবে তাদের আকৃতি। ষাট হাত লম্বা হবে তাদের দেহ। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৮৬] 


হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব হাদীস) যা আবু হুরায়রা (রাঃ) আমাদের শুনিয়েছেন,এভাবে তিনি কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করেন। এর থেকে একটি হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দলটি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। সেখানে তারা থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বেনা এবং পায়খানাও করবে না। তাদের বরতন এবং চিরুনিসমূহ স্বর্ণ এবং রৌপ্য নির্মিত হবে। তাদের ধুপদানীগুলো হবে অগর কাঠের। তাদের ঘাম হবে মিশক এর ন্যায় সুঘ্রাণযুক্ত। তাদের প্রত্যেকেরই দু'জন করে এমন স্ত্রী থাকবে যে, সৌন্দর্যের কারণে গোশতের উপর থেকে তাদের পায়ের গোছার মগজ দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য থাকবে না এবং থাকবে না কোন হিংসা বিদ্বেষ। তাদের হৃদয় একই হৃদয়ের ন্যায় হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৮৮]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আরাম আয়েশে থাকবে ও চিন্তা মুক্ত থাকবে। তার কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনো নিঃশেষ হবে না। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৯৩] 


আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন আহবানকারী জান্নাতী লোকদেরকে আহবান করে বলবে, এখানে (সর্বদা) তোমরা সুস্থ থাকবে, আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো আর তোমরা বৃদ্ধ হবে না। তোমরা (সর্বদা) সুখ-সাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কখনো আর তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হবে না। এ মর্মে মহামহিম আল্লাহর বানীঃ এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৯৪] 


আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে মুমিনদের জন্য ভেতর ফাঁকা মুক্তার তাঁবু হবে। এর প্রস্থ হবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক প্রান্তেই পরিবার (স্ত্রী) থাকবে। তারা ঘুরে ঘুরে তাদের সাথে মেলামেশা করবে অন্যদের দেখতে পাবে না। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৯৬]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সায়হান, জায়হান, ফুরাত ও নীল এসব জান্নাতের নহর সমূহেরই অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৯৮]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা জাহান্নাম ও জান্নাত বিতর্কে লিপ্ত হল। জাহান্নাম বলল, অহংকারী এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোক দ্বারা আমাকে প্রাধন্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলল, আমার কি হল, মানুষের মাঝে যারা দুর্বল, নীচু স্তরের এবং অক্ষম, তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত, আমার বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুনা বর্ষণ করব। এরপর তিনি জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব, আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপুর হিস্যা। তবে (প্রথমে) জাহান্নাম পূর্ণ হবে না। তাই আল্লাহ তাআলা এতে তার পা রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, ব্যাস, ব্যাস। এ সময়ই জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং তার (জাহান্নামীদের) এক অংশ অপর অংশের সাথে প্রচণ্ড চাপ খাবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯১০]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ স্থান জান্নাতে খালি থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা নিজ ইচ্ছা মুতাবিক এর জন্য (নতুন) মাখলুক সষ্টি করবেন। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯১৭]

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর পর তাদের মধ্যখানে জনৈক ঘোষণাকারী দাঁড়িয়ে ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! (এখন) মৃত্যু নেই, হে জাহান্নামীরা! (এখন) মৃত্যু নেই। অনন্তকাল তোমরা স্ব-স্ব-স্থানেই থাকবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯২০]

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন মৃত্যু কে আনা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দাঁড় করিয়ে যবাহ করে দেয়া হবে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে আর তোমাদের মৃত্যু নেই। অনুরূপভাবে জাহান্নামীদেরকেও বলা হবে, হে জাহান্নামীরা! আর তোমাদের মৃত্যু নেই। এতে জান্নাতীদের খুশীর সাথে আরো খুশী বৃদ্ধি পাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখের সাথে আরো দুঃখ সংযোজিত হবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯২১]

হারিসা ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমদেরকে জান্নাতবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেনঃ তারা হবে দুর্বল এবং নম্র স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে দোযখবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব? সাহাবীগণ বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বরলেন, তারা হবে অত্যাচারী, দাম্ভিক ও অহংকারী লোক। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯২৪]

আবূ গাসসান আল-মিসমাঈ, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশিঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ রত অবস্থায় বললেনঃ শোন, আমার প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, যে বিষয়ে তোমরা অজ্ঞ। তা হল এই যে, আমি আমার বান্দাদেরকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছি তা পরিপূর্ণরূপে হালাল। আমি আমার সমস্ত বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ (মুসলিম) হিসাবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন হতে বিচ্যুত করে দেয়। আমি যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য হালাল করেছিলাম সে তা হারাম করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শিরক করার জন্য নির্দেশ দিল, যে বিষয়ে আমি কোন সনদ পাঠাইনি।

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীরবাসীদের প্রতি নযর করে কিতাবীদের কতিপয় লোক ব্যতীত আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমি তোমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না। ঘুমন্ত ও জাগ্নত অবস্থায় তুমি তা পাঠ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুরায়শ গোত্রের লোকদেরকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তখন বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আমি যদি এ কাজ করি তবে তারা তো আমার মাথা ভেঙ্গে রুটির ন্যায় টুকরা টুকরা করে ফেলবে। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তারা যেমনিভাবে তোমাকে বহিস্কার করেছে ঠিক তুদ্রূপ তুমিও তাদেরকে বহিস্কার করে দাও। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমি তোমাকে সাহায্য করব। ব্যয় কর (আল্লাহর পথে), তোমার জন্যও ব্যয় করা হবে। তুমি একটি বাহিনী প্রেরণ কর, আমি অনুরূপ পঞ্চ বাহিনী প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমর বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সাথে লড়াই কর।

তিন প্রকার মানুষ জান্নাতী হবে। (এক প্রকার মানুষ) তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফীক লাভে ধন্য লোক। (দ্বিতীয়) তারা ঐ সমস্ত মানুষ, যারা দয়ালু এবং আত্নীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। (তৃতীয়) ঐ সমস্ত মানুষ, যারা পুত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক।

অতঃপর তিনি বললেনঃ পাঁচ প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবো (এক) এমন দুর্বল মানুষ, যাদের মাঝে (ভাল-মন্দ) পার্থক্য করার বুদ্ধি নেই, যারা তোমাদের এমন তাবেদার যে, না তারা পরিবার-পরিজন চায়, না ধনৈশ্বর্য। (দুই) এমন খিয়নতকারী মানুষ, সাধারণ বিষয়েও যে খিয়ানত করে যার লোভ কারো নিকটই লুক্কায়িত নেই। (তিন) ঐ লোক, যে তোমার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের ব্যাপারে তোমার সাথে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। (চার) কৃপণতা ও (পাঁচ) মিথ্যাবলার কথাও উল্লেখ করেছেন। আর বলেছেন 'শিনজীর' হল চরম অশ্লীলতাবাদী। তবে আবূ গাসসান (রহঃ) তার হাদীসের মধ্যে وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ কথাটি উল্লেখ করেননি। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৩]

সূনান তিরমিজীঃ
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার রব আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে এবং বিনা আযাবে জান্নাতে দাখেল করবেন। প্রত্যেক হাজারের সঙ্গে হবে আরো সত্তর হাজার করে এবং তৎসহ আরো হবে আমার পরওয়ারদিগারের তিন অঞ্জলী পরিমাণ লোক। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যখন রাত্রিকালীন সফর মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি এমন নাবী ও নাবীদের জামা‘আতের পাশ দিয়ে গিয়েছেন যাদের সঙ্গে আছে একদল, এমন নাবী ও নাবীদের জামা‘আতের পাশ দিয়ে গিয়েছেন যাদের সঙ্গে আছে একদল উম্মত, এমন নাবী ও নাবীদের জামা‘আতের পাশ দিয়ে গিয়েছেন যাদের সঙ্গে কোন একজনও নেই। শেষে তিনি বিরাট এক দলের পাশ দিয়ে গেলেন।

(তিনি বলেন) আমি বললামঃ এরা কারা? বলা হলঃ মূসা ও তাঁর কাওম। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন।

তিনি বলেনঃ আমি দেখি অগনিত মানুষের মহা এক সমাবেশ, এ দিগন্ত সে দিগন্ত পূর্ণ করে রেখেছে। বলা হল, এরা আপনার উম্মত। এরা ছাড়াও আপনার উম্মতের সত্তর হাজার লোক হিসাব ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে।

এরপর নাবীজী হুজরায় চলে গেলেন। সাহাবীগণ এ সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি আর নাবীজীও এ বিষয়ে তাঁদের কোন ব্যাখ্যা দেন নি। তারা নিজেরা নিজেরা বলাবলি করতে লাগলেন। একদল বললেনঃ এরা হলাম আমরা। এক দল বললেনঃ এরা হল ঐ সব সন্তান ইসলাম ও ফিতরতের উপর যাদের জন্ম হয়েছে।

কিছুপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে বললেনঃ এরা হল তারা যারা লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়-ফুঁক করে না, শুভাশুভের লক্ষণ মেনে চলে না, আর তাদের পরওয়ারদিগারের উপর তারা সদা নির্ভরশীল।

তখন উককাশা ইবন মিহসান উঠে দাঁড়ালেন, বললেনঃ আমি কি তাদের মধ্যে হব, ইয়া রাসূলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।

এরপর আরেকজন এল, বললেনঃ আমি কি তাদের থেকে হব? তিনি বললেনঃ এ মর্যাদা লাভে উককাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন লোকেরা দ্রুত তাঁর দিকে ছুটে গেল। বলাবলি হতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছন। লোকদের মধ্যে আমিও তাঁকে দেখতে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা যখন আমার সামনে প্রতিভাত হল আমি চিনে ফেললাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তিনি প্রথম যে কথা উচ্চারণরণ করলেন তা হলঃ হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রসার ঘটাবে, লোকদের খাদ্য দিবে, মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে (শেষ রাতে) তখন তাহাজ্জুদের) সালাত (নামায) আদায় করবে। তাহলে তোমরা শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে দাখেল হতে পারবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৮৭, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কে জাহান্নামের জন্য হারাম এবং কার জন্য জাহান্নাম হারাম সে খবর তোমাদের দিব কি? সে হল যে মানুষের নিকটবর্তী এবং সহজ-সরল ও কোমল। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৪৯০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার তাওবায় আল্লাহ তা‘আলা এমন এক ব্যক্তির চেয়েও বেশী আনন্দিত হন যে ব্যক্তি গাছ-পালা ও পানি বিহীন বিজন ভয়াবহ এক মরুভূমিতে যাত্রা করছে। তার সাথের বাহনটিতে সে তার পাথেয় খাদ্য, পানীয় এবং আরো যা যা তার দরকারী জিনিসপত্র রেখেছে। কিন্তু হঠাৎ সে তার বাহনটি হারিয়ে ফেলল। সে তার তালাশ করতে লাগল কিন্তু সে (তা না পেয়ে) যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে পড়ল ভাবল যেখান থেকে সেটিকে হারিয়ে ছিলাম ঐখানেই ফিরে যাই এবং সেই স্থানে গিয়েই মরি। অনন্তর সে ঐ স্থানে ফিরে এল। একসময় (ক্লান্তিতে) তার বুজে আসল। হঠাৎ জেগে দেখে তার বাহনটি মাথার কাছে দাঁড়ান। তার খাদ্য, পানীয়, দরকারী জিনিষপত্র সবই তাতে রয়েছে। (এমতাবস্থায় এই ব্যক্তি যতটুকু আনন্দিত হবে আল্লাহ তাআলা কোন বান্দার তাওবায় এতদপেক্ষা অরেক বেশী আনন্দিত হয়ে থাকেন। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৫০০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আদম সন্তানদের প্রত্যেকেই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারী ব্যক্তিরা হল উত্তম। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৫০১, হাদিসের মানঃ হাসান]

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের রূপ হবে পূর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায়; দ্বিতীয় দলটির রং হবে আকাশের উজ্জল নক্ষত্র থেকেও সুন্দর; তাদের প্রত্যেক পুরুষের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী। প্রত্যেক স্ত্রীর পরনে থাকবে ৭০টি জোড়া, যার উপর থেকে তার পায়ের গোছার মজ্জা পর্যন্ত দেখা যাবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪০/কিয়ামত, হাদিস নম্বরঃ ২৫২৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে এমন গাছ আছে যে, এর ছায়ায় একজন আরোহী একশ’ বছর পর্যন্তও চলতে পারবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫২৫, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে যে সব গাছ আছে সেগুলোর কাণ্ড- হল স্বর্ণের। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫২৭, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের একি অবস্থা যে, যখন আপনার কাছে থাকি তখন আমাদের হৃদয় কোমল হয় এবং আমরা দুনিয়া বিমুখ হয়ে পড়ি। আর আমরা হয়ে যাই আখিরাতের লোকের ন্যায়। কিন্তু যখন আপনার এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে পরিবার-পরিজনদের সাথে মেলামেশা করি এবং সন্তান-সন্ততিদের সোহাগ করি তখন আমাদের মনকে অন্য রকম পাই।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন তোমরা আমার নিকট থেকে বেরিয়ে যাও তখনও যদি তোমরা সে অবস্থায় থাকতে তবে ফিরিশতাগণ তোমাদের ঘরে এসে তোমাদের যিয়ারত করতেন। তোমাদের যদি গুনাহ্ সংঘটিত না হত তবে আল্লাহ্ তা’আলা নতুন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যেন তারা গুনাহ্ করে আর তিনি তাদের মাফ করেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্, কিসের থেকে এই সৃষ্টিকুলের সৃষ্টি? তিনি বললেনঃ পানি থেকে। আমি বললাম, জান্নাতের নির্মাণ কি দিয়ে?

তিনি বললেনঃ এর একটি ইট হল রূপার আর একটি হল সোনার। এর গাঁথুনী হল সুগন্ধময় মিশকের। এর নুড়িগুলো হল মাটির ও ইয়াকুতের, মাটি হল যাফরানের। যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামত ও সুখ ভোগ করবে, কষ্ট পাবে না কখনও। সদাসর্বদা থকবে, মৃত্যু হবে না কখনও। তাদের পরিচ্ছদ কখনও পুরাতন হবে না, আর তাদের যৌবন কখনও শেষ হবে না।

এরপর তিনি বললেনঃ তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দু’আ কখনও প্রত্যাখ্যান করা হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তা, রোযাদার যখন সে ইফতার করে এবং মজলুমের দু’আ। যা মেঘের উপরও তুলে নেওয়া হয় এবং আসমানের সব দরজা এর জন্য খুলে দেওয়া হয়, আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ আমার ইযযতের কসম, কিছুকাল পরে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫২৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ বকর ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন কায়স তার পিতা আবদুল্লাহ্ ইবন কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের দু’টো বাগিচা হবে রূপার। এ দুটোর পাত্রগুলো এবং যা কিছু আছে সবই হবে রূপার। আর দুটো বাগিচা হবে সোনার। এ দু’টোর পাত্রগুলো এবং যা কিছু আছে সবই হবে সোনার। জান্নাতে আদনে জান্নাতবাসী সম্প্রদায় এবং তাদের প্রভুর দর্শনের মাঝে প্রভুর চেহারার উপর কিবরিয়াঈ (মহাপরাক্রমশীল গৌরবের) চাদর ভিন্ন আর কোন হিজাব থাকবে না। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে একশ’টি স্তর বিদ্যামান। প্রতিটি স্তরের মাঝে রয়েছে একশ’ বছরের দূরত্বের ব্যবধান। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩১, হাদিসের মানঃ সহিহ]

মুআয ইবন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের সিয়াম পালন করেছে, সালাত (নামায) আদায় করেছে, বায়তুল্লাহর হজ্জ আদায় করেছে, আতা (রহঃ) বলেন, মুআয (রাঃ) যাকাতের কথাও উল্লেখ করেছিলেন কি না জানি না। সে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করুক বা যেখানে জন্মগ্রহণ করেছে সেই মাটিতেই বসা থাকুক আল্লাহর উপর হক হল তাকে মাফ করে দেওয়া। মুয়ায (রাঃ) বললেনঃ লোকদের কি এ কথার খবর দিব না?

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকদেরকে আমল করতে দাও। কেননা, জান্নাতে একশ’টি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মধ্যে আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত দূরত্ব বিদ্যমান। জান্নাতুল ফিরদাওস হল সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম জান্নাত। এর উপর হল রাহমানুর রাহীমের আরশ। সেখান থেকেই জান্নাতের নহরগুলো প্রবাহিত হচ্ছে। সূতরাং তোমরা যখন আল্লাহর কাছে সওয়াল করবে তখন তাঁর কাছে জান্নাতুল ফিরদাওসের প্রার্থনা জানাবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩২, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


উবাদা ইবন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে একশ’টি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মাঝের দূরত্ব হল আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত। জান্নাতুল ফিরদাওস হল এর সর্বোচ্চ স্তর। এ থেকেই জান্নাতের চারটি নহর প্রবাহিত হয়। এর উপরে হল আরশ। তোমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে করবে তখন তাঁর কাছে জান্নাতুল ফিরদাওসের প্রার্থনা জানাবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩৩, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবেন তাঁরা হবেন পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল; দ্বিতীয় যে দলটি প্রবেশ করবেন তাঁরা হবেন আকাশের সুন্দরতম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। প্রত্যেকের দু’জন করে স্ত্রী হবে। প্রত্যেক স্ত্রীর গায়ে সত্তর জোড়া করে পোষাক থাকবে। এর ভিতর থেকেও তাদের পায়ের নলার হাড্ডির মগজ পরিদৃষ্ট হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩৭, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে প্রত্যেক মুমিনকে এত এত সঙ্গম শক্তি দেওয়া হবে। বলা হয়ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তা করতে সক্ষম হবে কি? তিনি বললেনঃ তাকে তো একশ’ জনের শক্তি দেওয়া হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৩৮, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে যা আছে এর থেকে একটি নখ যা উঠাতে পারে এতটুকু পরিমাণ জিনিসও যদি (লোকদের সামনে) প্রকাশ পেত তা হলে আকাশ ও পৃথিবীর সব দিক সুসজ্জিত হয়ে যেত। জান্নাতেবাসীদের কেউ যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি দিত এবং তার কংকন যদি প্রতিভাত হত তাহলে সূর্যের আলো যেমন তারার আলোকে স্নান করে দেয় তেমনিভাবে তা সূর্যের আলোকেও স্নান করে দিত। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীগণ লোমহীন ও শ্মশ্রুহীন এবং আয়ত কাজল টানা চোখ বিশিষ্ট হবেন। তাঁদের যৌবন শেষ হবে না কখনও এবং তাদের পোষাক-পরিচ্ছেদ পুরনো হবে না কখনও। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪১, হাদিসের মানঃ হাসান]

মুআয ইবন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতীরা লোমহীন, শ্মশ্রুহীন, কাজলটানা চোখ বিশিষ্ট ত্রিশ বা তেত্রিশ বছরের যুবকরূপে জান্নাতে দাখিল হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৭, হাদিসের মানঃ হাসান]

সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (‏لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ) যারা নেক কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেক বদলা এবং আরো বেশী (ইউনুস ১০ঃ ২৬) সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে দাখিল হয়ে যাবে তখন এক আহবানকারী হেঁকে বলবেঃ আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য আরো ওয়াদা রয়েছে।

জান্নাতীরা বলবেঃ তিনি কি আমাদের চেহারা সমুজ্জ্বল করে দেন নি? আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি এবং জান্নাতে দাখিল করেননি? আহ্বানকারী বলবেঃ অবশ্যই। অনন্তর (আল্লাহর দীদারের জন্য) পর্দা তুলে দেওয়া হবে। আল্লাহর কসম, আল্লাহর দীদার অপেক্ষা প্রিয় আর কোন জিনিস তিনি তাদের দিবেন না। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৫৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীরা মর্যদার তারতম্যের প্রেক্ষিতে একজন আরেকজনকে বালাখানাসমূহে অবলোকন করবে, যেমন তোমরা অস্তাচলে বা উদয়াচলে পূর্ব বা পশ্চিমের তারা অবলোকন করে থাকে। সাহাবীরা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তাঁরা তো নাবীগণই হবেন? তিনি বললেনঃ অবশ্যই, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম; আর হল সেই সম্প্রদায় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং সকল রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৫৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

মুআবিয়া (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর ও শরাবের সাগর রয়েছে। এগুলো থেকে পরে আরো নহরের শাখা-প্রশাখা বের হবে। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৭২, হাদিসের মানঃ সহিহ] 


আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাতের দু’আ করে তবে জান্নাত তখন বলে, ’হে আল্লাহ্! একে জান্নাতে দাখিল করে দাও।’ আর কোন ব্যক্তি যদি জাহান্নাম থেকে তিনবার পানাহ চায় তবে জাহান্নাম বলে, ’হে আল্লাহ্! একে জাহান্নাম থেকে পানাহ দিয়ে দাও।’ [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪১/জান্নাতের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৫৭৩, হাদিসের মানঃ সহিহ]

হারিছা ইবন ওয়াহব খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে খবর দিব? তারা হল, প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যে দুর্বল বলে মনে করা হয় কিন্তু সে যদি আল্লাহর উপর কোন বিষয়ে কসম খায়, তবে আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যই তার কসম পূরণ করেন। শোন, জাহান্নামবাসী সম্পর্কে তোমাদের খবর দিব কি? তারা হল প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যে কটুভাষী, কৃপণ ও অহঙ্কারী। [সূনান তিরমিজী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪২/জাহান্নামের বিবরণ, হাদিস নম্বরঃ ২৬০৬, হাদিসের মানঃ সহীহ]

আল-লুলু ওয়াল মারজানঃ 

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারঃ কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে- (সূরাহ সাজদাহঃ ৩২/১৩)। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৭৯৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশত বছর চলতে থাকবে, তবুও সে এ ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৭৯৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মও বের হবে না। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিস্কের মত সুগন্ধযুক্ত। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদাম (আঃ)-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮০৫, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গুণসম্পন্ন মোতির তাঁবু থাকবে যার উচ্চতা ত্রিশ মাইল। এর প্রতিটি কোণে মুমিনদের জন্য এমন স্ত্রী থাকবে যাদেরকে অন্যরা কখনো দেখেনি। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮০৬, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করে। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কী হলো? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ ব্যক্তিরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর পা তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বাস, বাস, বাস। তখন জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি যুলম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলুক সৃষ্টি করবেন। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮০৯, হাদিসের মানঃ সহিহ]

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে আর জাহান্নামীগণ জাহান্নামে চলে যাবে, তখন মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে যব্‌হ করে দেয়া হবে এবং একজন ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা দিবে যে, হে জান্নাতীগণ! (এখন আর) কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ! (এখন আর কোন) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতীগণের আনন্দ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের বিষন্নতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। [তাওহীদ পাবলিকেশন, গ্রন্থঃ আল-লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যায়ঃ ৫১/জান্নাত, তার বিবরণ, আনন্দ-উপভোগ ও তার বাসিন্দা, হাদিস নম্বরঃ ১৮১২ হাদিসের মানঃ সহিহ]

আল্লাহ তাআলা আমাদের সুদৃঢ় ঈমান দান করুন এবং জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

ঈমান

ঈমান সম্পর্কিত নিচের হাদিসগুলো মুসলিম মাত্রই জানা অত্যন্ত জরুরী। আসুন তাহলে শুরু করি - ঈমান ও ইসলামঃ আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ...